উৎসবমুখর পরিবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩তম সমাবর্তন আজ ১৯ নভেম্বর ২০২২ শনিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে কার্জন হল, কলা ভবন, অপরাজেয় বাংলাসহ পুরো ক্যাম্পাস গ্র্যাজুয়েটদের পদচারনায় মুখরিত হয়ে ওঠে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় চ্যান্সেলর জনাব মোঃ আবদুল হামিদ সমাবর্তনে সভাপতিত্ব করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান সমাবর্তনে বক্তব্য রাখেন। নোবেল বিজয়ী ফরাসী অর্থনীতিবিদ Professor Dr. Jean Tirole সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তাঁকে সম্মানসূচক Doctor of Laws (Honoris Causa) ডিগ্রি প্রদান করা হয়।
ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ। সাইটেশন পাঠ করেন প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। এসময় কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, সিনেট-সিন্ডিকেট সদস্য, একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যসহ আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকার অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন।
মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় চ্যান্সেলর মোঃ আবদুল হামিদ সত্য ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনে নিজ নিজ অবস্থান থেকে অবদান রাখার জন্য গ্র্যাজুয়েটদের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, সকল প্রকার সংকীর্ণতা ও ধর্মান্ধতা থেকে নিজেকে এবং পরিবারের সদস্যদের মুক্ত রাখতে হবে। প্রগতি, আধুনিকতা ও সহনশীলতার দিকে আরো এগিয়ে যেতে হবে। শিক্ষার্জন যেন সমাবর্তন আর সার্টিফিকেটেই সীমাবদ্ধ না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আজকের এই অর্জনের পিছনে বাবা-মা, শিক্ষকমন্ডলী এবং রাষ্ট্রের যে অবদান ও ত্যাগ রয়েছে, তা হৃদয়ে ধারণ করতে হবে। দেশ ও জনগণের কল্যাণে সর্বদা নিজেকে নিয়োজিত রাখতে হবে।
তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শুধুমাত্র উচ্চ শিক্ষার একটি প্রতিষ্ঠান নয়। এটি আমাদের নেতৃত্বের প্রতীক, আমাদের পথ প্রদর্শক। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিসংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধসহ বাঙালির প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে গৌরবময় ভূমিকা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে জাতির প্রত্যাশা অনেক, আর তা পূরণে বিশ্ববিদ্যালয়কে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। পড়াশোনা ও গবেষণার উপযুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য শিক্ষকদের প্রতি আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, তরুণ গবেষকদের মেধা ও উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে দেশের মানুষের কল্যাণে এগিয়ে আসতে হবে। কিছুসংখ্যক অসাধু লোকের কর্মকান্ডের জন্য গোটা শিক্ষক সমাজের মর্যাদা যেন ক্ষুন্ন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। শিক্ষক হিসাবে নিজ পেশার প্রতি দায়িত্বশীল থাকতে হবে।
তিনি আরও বলেন, প্রযুক্তি আর আধুনিকতায় বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কর্মঠ আর যোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ মধ্যম আয়ের দেশ। আশা করি কিছুদিনের মধ্যেই ডিজিটাল বাংলাদেশ হবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’। শিক্ষার্থীদের কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে One Stop Service Center, Counseling and Support Center এবং Career Planning Unit চালু করার জন্য তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানান। সেশনজট কমানোর উদ্যোগ হিসেবে Loss Recovery Plan, গবেষণা-প্রকাশনা মেলা আয়োজন এবং Student Promotion & Support Unit চালু করায় তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নবজ্ঞাননির্মাণের ব্রতকে সামনে রেখে একদিকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ (এসডিজি) বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে; অপরদিকে, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের মতো প্রযুক্তিমুখ্য বিশ্বব্যবস্থার উপযোগী করে এর শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও গবেষকদের প্রস্তুত করার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বহুমুখী বাস্তবতাকে সামনে রেখে এই বিদ্যাপীঠ আগামী একশ বছরে কোন পথে এগিয়ে যাবে তা নির্ধারণে প্রয়াস চলছে।
গবেষণা ও উদ্ভাবন এবং শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন একাডেমিক চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘মাস্টার প্ল্যান’ প্রণয়ন করা হয়েছে। একাডেমিক যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ‘একাডেমিক উন্নয়ন পরিকল্পনা’ গ্রহণ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতিমান শিক্ষক ও গবেষকদের সমন্বয়ে গঠিত একটি কমিটি এ নিরিখে কাজ করছে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পূর্বাচল প্রকল্পে নলেজ-হাব গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা-উদ্ভাবন ক্যাম্পাস’ তৈরির উদ্যোগ আমরা গ্রহণ করেছি। আমরা চাই, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ও গ্রাজুয়েটবৃন্দ যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজেদের আত্মপ্রত্যয়ীরূপে বিশ্বদরবারে উপস্থাপন করতে সক্ষম হোক।
সমাবর্তন বক্তা Professor Dr. Jean Tirole বলেন, পেশাজীবনে সফলতা অর্জনের জন্য গ্র্যাজুয়েটদের আত্মবিশ্বাস, দায়িত্ববোধ ও সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষমতা থাকতে হবে। এক্ষেত্রে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার উপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, পরিকল্পিত উপায়ে কঠোর পরিশ্রম করলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে অসাধারণ সাফল্য ও অগ্রগতি অর্জনের জন্য তিনি বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
উল্লেখ্য, এই সমাবর্তনে ৩০ হাজার ৩শ’ ৪৮জন গ্র্যাজুয়েট ও গবেষক অংশগ্রহন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট ও উপাদানকল্প কলেজ/ইনস্টিটিউটের গ্র্যাজুয়েটবৃন্দ সমাবর্তনের মূল ভেন্যু বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ এবং অধিভুক্ত সরকারী সাত কলেজের গ্র্যাজুয়েটবৃন্দ ঢাকা কলেজ ও ইডেন কলেজ ভেন্যু থেকে সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করেন।
(মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম)
উপ-পরিচালক
জনসংযোগ দফতর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়