ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র, বিশিষ্ট পদার্থবিজ্ঞানী এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য অধ্যাপক ড. ছদরুদ্দিন আহমদ চৌধুরীর মৃত্যুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
আজ ২৪ জুলাই ২০১৬ রবিবার এক শোকবাণীতে উপাচার্য বলেন, অধ্যাপক ড. ছদরুদ্দিন আহমদ চৌধুরী ছিলেন বিশষ্ট পদার্থ বিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ, ভাষাসংগ্রামী, গবেষক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। তিনি পরিবেশ আন্দোলনের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালে তিনি ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন।
উপাচার্য তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং তাঁর পরিবারের শোক-সন্তপ্ত সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
অধ্যাপক ড. ছদরুদ্দিন আহমদ চৌধুরী ১৯৩১ সালের ১ জানুয়ারি সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার ফুলবাড়ী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪১ সালে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় তৎকালীন সমগ্র আসাম প্রদেশে মুসলমান ছাত্রদের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করে বৃত্তি লাভ করেন। সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিকুলেশন ও ১৯৫১ সালে এমসি কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে আইএসসি পাশ করেন। ১৯৫৪ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে অনার্স এবং ১৯৫৫ সালে এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। পরের বছরই রাজশাহী কলেজের শিক্ষক হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়। ১৯৫৮ সালে নবপ্রতিষ্ঠিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পেশায় নিয়োজিত হন। ১৯৬৬ সালে তিনি যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটি থেকে ‘এক্স-রে ক্রিস্টালোগ্রাফি’ বিষয়ে পিএইচ ডি ডিগ্রি লাভ করেন। ‘হিউম্যান ইনসুলিন’ তাঁর মৌলিক আবিষ্কার। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ছাত্র-শিক্ষকসহ সর্বস্তরের জনগণকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য উদ্বুদ্ধ করেছেন। তিনি ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৫ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটির একাডেমিক ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্বীকৃত জার্নালে তাঁর ৪০টিরও অধিক গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
এছাড়া, উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থাপনায় তিনি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেন। ড. ছদরুদ্দিন আহমদ চৌধুরী নিজস্ব জায়গায় সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠায় অগ্রনী ভূমিকা পালনের পাশাপাশি ২০১০ সাল পর্যন্ত এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ ফিজিক্যাল সোসাইটির ফেলো ও ১৯৯৪-৯৬ সালে সংগঠনটির সভাপতি, ওয়ার্ল্ড ইউনিয়ন অব ক্রিস্টালোগ্রাফির সদস্য ছিলেন।
উল্লেখ্য, গতকাল ২৩ জুলাই ২০১৬ শনিবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে বার্ধক্যজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। মৃত্যুকালে তিনি তিন কন্যা সন্তানসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
----------------
পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত)
জনসংযোগ দফতর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়