ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের আবাসন সংকট নিরসনের লক্ষ্যে ২ হাজার ৮শ’ ৪১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ‘চারটি ছাত্রী হলের বর্ধিত ভবন নির্মাণ প্রকল্প’ অনুমোদনের জন্য সরকারের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। এই প্রকল্প অনুমোদিত হলে প্রায় ৩ হাজার ছাত্রীর আবাসনের ব্যবস্থা হবে। এছাড়া, চীন সরকারের আর্থিক সহযোগিতায় ২৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রস্তাবিত ‘বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী হল নির্মাণ প্রকল্পটি’ বর্তমানে মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত মি. ইয়াও ওয়েন আজ ০৬ জানুয়ারি ২০২৫ সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে ছাত্রী হল নির্মাণে সহযোগিতার ব্যাপারে তাঁর অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২ হাজার ৮শ’ ৪১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে প্রস্তাবিত ৪টি ছাত্রী হলের বর্ধিত ভবন নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদনের বিষয়টি বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এই প্রকল্পে শাহনেওয়াজ হোস্টেল ভেঙ্গে ১৫-তলা বিশিষ্ট একটি ছাত্রী হল নির্মাণ, ১০-তলা ও ৬-তলা বিশিষ্ট শামসুন নাহার হলের দু’টি সম্প্রসারণ ভবন নির্মাণ, লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের বিদ্যমান স্টাফ কোয়ার্টার বি এবং ডি ভবন ভেঙ্গে ১১-তলা ও ৮-তলা বিশিষ্ট দু’টি ভবনের সমন্বয়ে একটি ছাত্রী হল নির্মাণ এবং ১০-তলা বিশিষ্ট কুয়েত মৈত্রী হলের সম্প্রসারণ ভবন নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীদের আবাসন সংকট নিরসনের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করে সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও বিশেষ বরাদ্দের মাধ্যমে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিভিন্ন ছাত্রী হলে প্রায় ৫শ’ বাঙ্ক বেড স্থাপন করে ইতোমধ্যেই বেশ কিছু ছাত্রীর আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্বচ্ছ পদ্ধতি ও সুষ্ঠু প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো ১ম বর্ষ আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের ছাত্রীদের আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যা অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় ব্যতিক্রমী ঘটনা। আবাসিক সংকটের মতো দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত একটি জটিল সমস্যা রাতারাতি সমাধান করা সম্ভব নয়। ইউজিসি, সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বন্ধু রাষ্ট্র, উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ সকল অংশীজনকে নিয়ে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে আবাসন সংকট নিরসন করা সম্ভব হবে বলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আশা করছে।
এছাড়া, বিশ্ব ব্যাংকের HEAT প্রজেক্টের (Higher Education Acceleration and Transformation Project) আওতায় ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য আবাসন বৃত্তি চালুর বিষয়টিও বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আগামী শিক্ষাবর্ষে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে যেসব ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হবে, তারা এই বৃত্তির আওতায় আসবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
ছাত্রীদের আবাসন সংকট নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গৃহীত সাম্প্রতিক বিভিন্ন পদক্ষেপের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
রোকেয়া হলে আবাসিক হওয়ার জন্য ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষে ১মবর্ষ আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের ৯শ’ জন ছাত্রী আবেদন করেন। এর মধ্যে সর্বমোট ৫শ’ ৭০জনকে সিট বরাদ্দ দেয়া হয়। ১ম কলে ৩শ’ ৫০জনকে সিট বরাদ্দ দেয়া হয়। ২য় কলে ২শ’ ২০জনকে সিট বরাদ্দ দেয়া হয়।
শামসুন নাহার হলে ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষে সংযুক্ত ৬১২জন ছাত্রীর মধ্যে ১ম কলে ২৩ জন এবং বিশেষ বিবেচনায় (প্রয়োজনের ভিত্তিতে) ৩৬ জনসহ সর্বমোট ৫৯ জনকে সিট বরাদ্দ দেয়া হয়। ইতিমধ্যে ২য় কল দেয়া হয়েছে, যেখানে অপেক্ষমান আরো ১০০ জন ছাত্রীকে সিট দেয়ার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এর মধ্যে ৩১ জন কে ১ সপ্তাহের মধ্যে সিট দেয়া হবে। এছাড়া, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ২০২২-২০২৩ সেশনসহ অন্যান্য সেশনের সর্বমোট ১৪২ জনকে সিট প্রদান করা হয়েছে।
বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হলে সিটের জন্য আবেদনকারী ২৯৩ জন ছাত্রীর মধ্যে ১৯৪ জনকে সিট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সিট প্রাপ্তির জন্য সাক্ষাৎকারে অনুপস্থিত ছিল ৪১জন। ২০১৮-২০১৯ সেশনের পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলে আরও ৫৮ জনকে সিট বরাদ্দ দেয়া সম্ভব হবে।
কবি সুফিয়া কামাল হলে ২০২৩-২০২৪ সেশনে সকল শিক্ষাবর্ষের মোট ৯৫২ জন ছাত্রী সিট বরাদ্দের জন্য আবেদন করে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩৯১ জনকে সিট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বর্তমানে আরও ১৫ জন কে সিট দেয়ার প্রক্রিয়া চলমান আছে। ২০১৮-২০১৯ সেশন এর সিট খালি হওয়া সাপেক্ষে পর্যায়ক্রমে সিট দেয়ার প্রক্রিয়া চলমান থাকবে।
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষে সিট বরাদ্দের জন্য আবেদনকারী ২০৫ জন ছাত্রীর মধ্যে সাক্ষাৎকারে উপস্থিত ছিল ১৯৫জন। এর মধ্যে ১৩৫ জনকে সিট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। চলতি মাসে বরাদ্দ দেয়া হবে আরও ২০ জনকে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সিটের জন্য আবেদনকারী ২০৫ জনের মধ্যে ১৬৪ জন ছাত্রীকে সিট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রীদের মাস্টার্স শেষ হলে আরো সিট খালি হবে এবং সেগুলো বরাদ্দ দেয়া হবে।
(মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম )
পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত)
জনসংযোগ দফতর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়